বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণী প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে বিইআরসি

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চলমান প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় কমিশনের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আপাতত দাম বাড়ানোর চলমান প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। 

রোববার কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গত ০৮ জানুয়ারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আইনি প্রক্রিয়া শুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। ঠিক চার দিনের মাথায় (১২ জানুয়ারি) নির্বাহী আদেশে ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। বিইআরসি প্রতিষ্ঠার পর নির্বাহী আদেশে এভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর নজির নেই। বিইআরসি কর্তৃক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকাকালীন নির্বাহী আদেশ দেওয়ায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

এর আগে বিইআরসি গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম প্রতি ইউনিট ৫ দশমিক ১৭ টাকা থেকে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করে। তারপরই বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন জমা দেয়। কোম্পানিগুলো আবেদন জমা দিলে চিঠি দিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের মতামত নেয় বিইআরসি।

ওই চিঠিতে বিইআরসিকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম চূড়ান্ত করতে বলা হয়। যার প্রেক্ষিতে ০৮ জানুয়ারি শুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। আইন অনুযায়ী শুনানির পর সম্পূরক প্রস্তাব (যদি থাকে) দেওয়ার জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। অর্থাৎ দাম বৃদ্ধির আদেশ থেকে মাত্র চার দিন পিছিয়ে ছিল বিইআরসি। প্রক্রিয়া যখন প্রায় শেষ দিকে, তখন কেন নির্বাহী আদেশ দিতে হলো সেটাই এখন অনেকের কাছে বড় প্রশ্ন।

সংশোধিত বিইআরসি আইন অনুযায়ী, গণশুনানিতে পরবর্তী ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অনির্দিষ্টকাল ঝুলিয়ে রাখার কোন সুযোগ নেই। হয় দাম বাড়িয়ে দিতে হবে, অথবা প্রস্তাব নাকচ করে দিতে হবে। সে হিসেবে আরও লম্বা সময় হাতে রয়েছে বিইআরসির। তবে বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান এবং তিন সদস্যের (মোট সদস্য চার জন) চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসেই। ৩০ জানুয়ারি সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী ও বজলুর রহমানের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান বজলুর রহমানের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ০৩ ফেব্রুয়ারি। ধারণা করা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মতপার্থক্য তৈরি হওয়ায় তারা আর কোন দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। তাদের প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় নির্বাহী আদেশ দেওয়ায় কমিশনও কিছুটা বিব্রত।

গণশুনানিতে অংশ নেওয়া ভোক্তাদের প্রতিনিধিরা ক্ষুব্ধ প্রক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, সবেমাত্র বিইআরসি হাঁটি হাঁটি পা পা করে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দিকে যাচ্ছে। একদিকে যেমন ভোক্তাদের স্বার্থ দেখা হতো, একইসঙ্গে কোম্পানিগুলোর কিছুটা হলেও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হতো। এখন সেই জায়গাটি আর থাকল না। কোম্পানির বোর্ড সভায় বসে সচিব যে সিদ্ধান্ত নেবে, মন্ত্রণালয় বসে তা অনুমোদন দিয়ে যাবেন। কারও কিছু বলার থাকবে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘোষিত নতুন দর চলতি জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে। আবাসিকের লাইফলাইন গ্রাহকের (৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী) ইউনিট প্রতি ১৯ পয়সা বাড়িয়ে ৩ টাকা ৯৪ পয়সা, প্রথমধাপে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪ টাকা ৪০ পয়সা করা হয়েছে।

০৮ জানুয়ারি শুনানিতে বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটি গড় ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ দেয়। সবচেয়ে বেশি ডিপিডিসির ১৬ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম আরইবির ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এর আগে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়।